অটিজম কি? অটিজম বলতে কি বুঝি
শিশুদের ইন্দ্রিয়ানুভুতি, অপরের সাথে যোগাযোগের দক্ষতা এবং সামাজিক
প্রক্রিয়াগুলোতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।ফলে, তাদের মধ্যে একই ধরনের অথবা ভিন্ন ভিন্ন আচরণের প্রবণতা দেখা যেতে পারে।
এটি জানা গুরুত্বপূর্ণ যে, অটিজমের লক্ষণগুলো স্নায়ুবৈকল্যজনিত এবং এক শিশুর
সাথে অন্য শিশুর আচরণ কখনোই একেবারে মিল থাকে না।
পোস্ট সূচিপত্র:অটিজম কি? অটিজম বলতে কি বুঝি
-
-ভূমিকা
-
-অটিজম কি?-What is autism?
-
-অ্যাসপার্জার্স সিনড্রোম-Asperger's syndrome
-
-অটিজম আছে এমন শিশুদের সাধারণ কিছু আচরণ
-
-সামাজিক লক্ষণসমূহ কি কি
-
-যোগাযোগের সমস্যা কিরূপ হতে পারে
-
-পুনরাবৃত্তিক মূলক আচরণ কাকে বলে
-
-অটিজমের সাথে সম্পর্কিত কিছু গুণাবলী ও সবল দিক
-
-অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার-এর কারণ কি
-
-অটিস্টিক শিশুদের শিক্ষা ও মূলধারার শিক্ষা কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করণ
-
-উপসংহার
ভূমিকা
দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় আমরা প্রতিনিয়ত নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি
হয়ে জীবন পার করি। সুখ, দুঃখ, হাসি, কান্না—এই সবই আমাদের
প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা। যখন একটি পরিবারে একটি শিশু আসে, তখন সেই
পরিবারের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। মা-বাবা তাদের শিশুটির
সুন্দর ভবিষ্যত গড়ে তোলার জন্য নানা ধরনের পরিকল্পনা শুরু করে, যার
একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো শিশুটির সুস্থ ও স্বাভাবিক বিকাশ।
শিশুদের শারীরিক, মানসিক ও বুদ্ধিভিত্তিক বিকাশ একটি নির্দিষ্ট ছকে
ঘটে, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রমও হতে পারে। যখন কোনো
বাবা-মা বুঝতে পারেন যে, তাদের শিশুটি অন্যান্য সাধারণ শিশুদের থেকে
ভিন্ন আচরণ করছে অথবা বিকাশের পথে সঠিক নিয়ম অনুসরণ করছে না, বা বয়স
অনুযায়ী অনেক পিছিয়ে রয়েছে, তখন তাদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। ধীরে
ধীরে এই চিন্তাভাবনা তাদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করতে পারে। সন্তানের
এই ভিন্নতা মেনে নিতে মা-বাবাকে প্রথমে নিজের মানসিক অবস্থার সাথে
সংগ্রাম করতে হয়। সেই সাথে, শিশুটির প্রতি সমাজ এবং পরিবারের
সদস্যদের নেতিবাচক মনোভাবের কারণে মা-বাবাকে নানা বাধার সম্মুখীন হতে
হয়।
অটিজম কি?-What is autism?
এই সমস্যা সাধারণত প্রাথমিক শৈশবকালে শুরু হয় এবং শিশুর
স্বাভাবিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে। অটিজমের লক্ষণগুলো সাধারণত
শিশুর জন্মের দেড় বছর থেকে তিন বছরের মধ্যে প্রকাশ পায়। সামাজিক
সম্পর্ক, যোগাযোগ এবং আচরণের ভিন্নতা এই সমস্যাটির মূল
বৈশিষ্ট্য।
অটিজমের কারণে শিশুর শারীরিক, বুদ্ধিভিত্তিক, শিক্ষা এবং
ইন্দ্রিয়ানুভূতির ক্ষেত্রেও কিছু সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে, যা
বিশেষভাবে লক্ষণীয়। তবে এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, সব
অটিস্টিক শিশুর আচরণ একরকম হয় না। কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য আছে যা
অধিকাংশ অটিস্টিক শিশুর মধ্যে পরিলক্ষিত হয়, তবে কিছু বৈশিষ্ট্য
প্রতিটি শিশুর ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা হতে পারে। অটিজম স্পেকট্রাম
ভিন্ন ভিন্ন ধরনের বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে, যা একে একটি রংধনুর
সাথে তুলনা করা যায়—যেমন রংধনুর বিভিন্ন রং থাকে, তেমনি অটিজম
স্পেকট্রামেও বিভিন্ন ধরনের অটিজম দেখা যায়।
অ্যাসপার্জার্স সিনড্রোম-Asperger's syndrome
অ্যাসপার্জার্স সিনড্রোম একটি ধরনের অটিজম, যা অটিজম
স্পেকট্রামের মধ্যে পড়ে। এই শিশুরা আচরণগত সমস্যার সম্মুখীন
হলেও, তাদের বুদ্ধিভিত্তিক এবং ভাষাগত বিকাশ সাধারণভাবে
স্বাভাবিক থাকে। ভাষার বিকাশে সমস্যা না থাকলেও, তাদের মধ্যে
সামাজিক সম্পর্ক এবং আলাপচারিতায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে
সমস্যা দেখা দেয়। তারা একে অপরকে চোখে চোখ রেখে তাকানো,
মৌখিক অভিব্যক্তি, ইশারা ইঙ্গিত, শারীরিক অঙ্গভঙ্গি এবং
আবেগের বহিঃপ্রকাশ বোঝে না।
এই শিশুরা কথার আক্ষরিক মানে বুঝতে থাকে, যার ফলে তারা
বাগধারা, প্রবাদ, রসিকতা এবং ব্যঙ্গ বুঝতে পারে না। তাদের
বিকাশ সাধারণত বিলম্বিত হয় না, বরং শিক্ষা ক্ষেত্রে তারা
অনেক সময় এগিয়ে থাকে এবং তাদের বুদ্ধিমত্তাও সাধারণ
মানুষের তুলনায় বেশি হতে পারে। মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের
মধ্যে অ্যাসপার্জার্স সিনড্রোমের হার দশ গুণ বেশি।
এরা যে কোনো বিষয়ে সঠিকভাবে পড়তে পারে এবং বিষয়টির
প্রাসঙ্গিকতা বুঝতে পারে না। সাধারণত অ্যাসপার্জার্স
শিক্ষার্থীদের শব্দভাণ্ডার অনেক বড় থাকে। তারা খুব
সুন্দরভাবে গুছিয়ে কথা বলতে পারে এবং অনেক সময় তাদের
পছন্দের বিষয় নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করতে পারে। তবে, সেই সময়ে
তারা খেয়াল রাখে না যে, আশেপাশের মানুষরা সেই বিষয়ের প্রতি
আগ্রহী কি না।
অটিজম আছে এমন শিশুদের সাধারণ কিছু আচরণ
যে সমস্ত লক্ষণগুলো দেখে আমরা বুঝতে পারি যে, শিশুটি
অটিজমে আক্রান্ত কিনা, তা নিম্নরূপ:
- চোখে চোখ রেখে না তাকানো বা খুব কম তাকানো
- ডাকলে সাড়া না দেওয়া
- বিকাশজনিত দক্ষতার মধ্যে অমিল
- দৈনন্দিন রুটিন পরিবর্তন হলে সমস্যা সৃষ্টি
হওয়া
- অতিরিক্ত চঞ্চলতা বা উত্তেজনা
- আবেগ প্রকাশে সমস্যা
- অস্বাভাবিক শারীরিক অঙ্গভঙ্গি
- সত্যিকারের বিপদে ভয় না পাওয়া, তবে তেমন বিপজ্জনক না
হওয়া সত্ত্বেও কিছু পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত ভয়
পাওয়া
- হাসি-কান্নায় অসঙ্গতি
- কোনো কিছুতে অস্বাভাবিক আকর্ষণ
- খাওয়া, ঘুম বা শারীরিক প্রক্রিয়া নিয়ে
অস্বাভাবিকতা
- নিজের বা অপরের জন্য ক্ষতিকর আচরণ
- অখাদ্য খাওয়ার প্রবণতা
সামাজিক লক্ষণসমূহ কি কি
অটিজমে আক্রান্ত বেশিরভাগ শিশুদের মধ্যে সামাজিক
মিথস্ক্রিয়ার প্রতি আগ্রহের অভাব এবং এর সঙ্গে
সম্পর্কিত সমস্যা দেখা যায়। প্রথম কয়েক মাসে, তারা
অন্যদের চোখে চোখ রেখে তাকায় না এবং সাধারণত একা
থাকতে পছন্দ করে। এসব শিশু অন্যদের মনোযোগ আকর্ষণ
করতে আগ্রহী থাকে না এবং জড়িয়ে ধরা বা আদর করতে
ভালোবাসে না। তারা অন্যদের রাগ বা ভালোবাসার প্রতি
স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখায় না।
এছাড়াও, এই শিশুরা কোনো কিছু শিখতে অনেক বেশি সময়
নেয় এবং অন্যদের চিন্তা ও অনুভূতির প্রতি আগ্রহের
অভাব থাকে। সাধারণ ইশারা, যেমন মুচকি হাসি, চোখ
পিটপিট করা বা মৌখিক অভিব্যক্তি তাদের কাছে কোনো
অর্থপূর্ণ সংকেত নয়। যারা ইশারা বা অন্যান্য
সামাজিক সংকেত বুঝতে পারে না, তাদের জন্য সহজ
বাক্যও—যেমন "এদিকে এসো"—সবসময় একই অর্থ বহন করে,
যদিও বাস্তবে এই বাক্যটির বিভিন্ন প্রাসঙ্গিকতা
থাকতে পারে।
দেহভঙ্গি ও মৌখিক অভিব্যক্তি না বোঝার কারণে এসব
শিশুদের সামাজিক জগৎ অনেক সময় অপ্রাসঙ্গিক এবং
বোধহীন মনে হয়। অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা মাঝে মাঝে
উত্তেজিত হয়ে আক্রমণাত্মক হতে পারে, যা তাদের
সামাজিক সম্পর্ক স্থাপন ও বজায় রাখতে বাধা সৃষ্টি
করে। যখন তারা অপরিচিত পরিবেশে প্রবেশ করে, তখন তারা
রেগে যায় বা হতাশায় ভোগে। কিছু ক্ষেত্রে, তারা
নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতে পারে, যার ফলে
তারা জিনিসপত্র ভাঙতে পারে, অন্যকে আঘাত করতে পারে
বা নিজের শরীরে আঘাত করতে পারে।
যোগাযোগের সমস্যা কিরূপ হতে পারে
যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো ভাষা,
তবে অটিস্টিক শিশুদের মধ্যে যোগাযোগে সমস্যা
দেখা দেয়। ভাষাগত বিকাশের ক্ষেত্রে অটিস্টিক
শিশুদের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।
কিছু শিশুরা কখনোই কথা বলতে শেখে না এবং সারা
জীবন নির্বাক থাকে, আবার কিছু শিশুরা জন্মের
কয়েক মাস পরে *বাবলিং* (অলস শব্দ) শুরু করলেও,
কিছু সময় পর সেটি বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে, কিছু
শিশুর ভাষা শিখতে পাঁচ থেকে নয় বছর পর্যন্ত সময়
লেগে যায়।
অনেক অটিস্টিক শিশুর ভাষার ব্যবহারে কিছু
অস্বাভাবিকতা থাকতে পারে। তারা সঠিক বাক্য গঠন
করতে পারছে না এবং শব্দের সঠিক বিন্যাসে সমস্যা
থাকতে পারে। কিছু শিশু তাদের মনোভাব প্রকাশ করতে
যেটি শিখেছে, শুধু তা নিয়েই কথা বলে, আবার কিছু
শিশু একবার শোনা শব্দ বারবার পুনরাবৃত্তি করে,
যা *ইকোলালিয়া* নামে পরিচিত।
কিছু অটিস্টিক শিশু রয়েছে যাদের ভাষাগত
ক্ষেত্রে খুব সামান্য সমস্যা থাকে। তারা অনেক
শব্দ ব্যবহার করে ভালোভাবে কথা বলতে পারে, তবে
কথোপকথন চালিয়ে যেতে পারে না। তারা বাক্যের
প্রকৃত অর্থ বা তার পরিবর্তন বুঝতে পারে না।
এছাড়া, শারীরিক অঙ্গভঙ্গি বা কণ্ঠস্বরের ওঠানামা
যা বাক্যের অর্থের পরিবর্তন ঘটায়, তা তারা
সঠিকভাবে বোঝে না।
পুনরাবৃত্তিক মূলক আচরণ কাকে বলে
অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা শারীরিকভাবে
সাধারণত স্বাভাবিক থাকে এবং বেশিরভাগেরই
উচ্চ পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা থাকে। তবে,
তাদের মধ্যে অস্বাভাবিক পুনরাবৃত্তিমূলক
আচরণ থাকে, যা তাদের অন্যান্য শিশুদের থেকে
আলাদা করে তোলে।এছাড়া, তারা সাধারণত খেলনা গাড়ি বা ট্রেন
দিয়ে খেলার পরিবর্তে এগুলোকে এক লাইনে
সাজিয়ে রাখে। যদি কেউ তাদের সাজানো গাড়ি বা
ট্রেন নড়িয়ে ফেলে, তাহলে তারা খুব হতাশ ও
বিচলিত হয়ে পড়ে। অটিস্টিক শিশুরা চায় তাদের
চারপাশে সবকিছু একই রকম এবং অপরিবর্তিত থাকুক।
তারা কোন পরিবর্তন পছন্দ করে না। তাদের
দৈনন্দিন রুটিন, যেমন নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়া,
গোসল করা, এবং একই রাস্তায় নির্দিষ্ট সময়ে
স্কুলে যাওয়া, একটু হলেও পরিবর্তিত হলে তারা
বিরক্ত হয়ে যায়।
এই পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ তাদের দিনযাপনকে এক
রকমভাবে সাজিয়ে রাখে। যেমন, কিছু শিশুরা ফ্যান,
ঘোড়া বা আলোতে দীর্ঘ সময় ধরে তাকিয়ে থাকতে
পছন্দ করে এবং এই ধরনের আচরণে তারা সময় কাটিয়ে
দেয়।
অটিজমের সাথে সম্পর্কিত কিছু গুণাবলী ও
সবল দিক
অটিজমে আক্রান্ত কিছু শিশুর মধ্যে অসাধারণ
দক্ষতা বা প্রতিভা দেখা যায়। যদিও এসব শিশুর
সংখ্যা খুব কম, তবে তাদের এই বিশেষ ক্ষমতা তাদের
জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং তাদেরকে বিশেষভাবে অনন্য
করে তুলতে পারে। এটা ভুল ধারণা যে, প্রতিটি
অটিস্টিক শিশুর মধ্যে এমন বিশেষ প্রতিভা থাকবে।
তবে, যদি আমরা সচেতনভাবে তাদের দিকে মনোযোগ দিই,
তাহলে তাদের সুপ্ত প্রতিভাগুলোকে সহজেই খুঁজে
বের করা সম্ভব, যা তাদের অন্যান্য দিকের ঘাটতিকে
কিছুটা হলেও পূরণ করতে সাহায্য করতে পারে।
অটিস্টিক শিশুরা যে বিষয়ে বেশি মনোযোগ দেয়,
সেখানেই তাদের প্রতিভা বিকাশিত হতে পারে। যেমন,
কিছু শিশু ক্যালেন্ডারের দিকে মনোযোগ দিয়ে
বিখ্যাত ব্যক্তিদের জন্মতারিখ বা বিশেষ ঘটনাগুলি
সঠিকভাবে মনে রাখতে পারে এবং একসাথে অনেক তথ্য
মনে রাখতে সক্ষম হয়। আবার, কিছু শিশু জটিল এবং
কৌশলগত কাজগুলো ছোট ছোট অংশে ভাগ করে মনোযোগ
দিয়ে সেগুলি সমাধান করতে পারে।
অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে কিছু বিশেষ
ক্ষমতা বা দক্ষতা দেখা যেতে পারে, যেমন:
- অত্যন্ত নিপুণভাবে দেখার ক্ষমতা
- সুশৃঙ্খল নিয়ম ও নীতির ধারণা
- বিস্তারিত বা মুখস্ত করার ক্ষমতা, যেমন
ট্রেনের সময়সূচী বা খেলার স্কোর মনে রাখা
- দীর্ঘ মেয়াদী স্মৃতি
- কম্পিউটার ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা
- সংগীত এবং বাদ্যযন্ত্রের প্রতি আগ্রহ
- বিশেষ পছন্দের বিষয়গুলোর প্রতি মনোযোগ
- শৈল্পিক দক্ষতা
- অল্প বয়সে লিখিত ভাষা পড়তে ও বুঝতে
পারা
- বানান মনে রাখা
- সততা
- সমস্যা সমাধানে দক্ষতা
এই ধরনের দক্ষতা অটিস্টিক শিশুর শখ বা আগ্রহের
সাথে সম্পর্কিত হতে পারে এবং তাদের ভবিষ্যতের
বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে
পারে।
অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার-এর কারণ
কি
এক কথায় বলতে গেলে, অটিজমের সুনির্দিষ্ট
কারণ এখনো চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। তবে
অটিজম সম্পর্কে সচেতনতা ও গবেষণার পরিধি
বাড়ানোর সাথে সাথে এর কারণ অনুসন্ধানের
কাজও ত্বরান্বিত হচ্ছে। বর্তমান বিজ্ঞান
অনুসারে, বিভিন্ন কারণে অটিজম হতে পারে—এটি
প্রতিষ্ঠিত বিষয়। অটিজমের বিভিন্ন জটিল
লক্ষণ থেকে স্পষ্ট হয় যে, একাধিক কারণের
সমন্বয়ে অটিজম তৈরি হতে পারে। জন্ম-পূর্ব,
জন্মকালীন এবং জন্মের পরবর্তী যেকোনো সময়
জেনেটিক বা ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশের প্রভাবে
অটিজম হতে পারে।
এছাড়া, যদি কোনো শিশুর মধ্যে অটিজমের কিছু
লক্ষণ দেখা যায়, তবে সেগুলো দেখেই এটা বলা
যাবে না যে শিশুটি অটিস্টিক। শিশুর অটিজম
আছে কিনা, তা নির্ধারণ করতে বিশেষজ্ঞ
চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। শিশু
বিশেষজ্ঞ, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, শিশু মনোরোগ
বিশেষজ্ঞ, শিশু ও স্নায়ু রোগ বিশেষজ্ঞ,
মনোবিজ্ঞানী কিংবা অটিজমে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত
চিকিৎসকই শিশুটির অটিজম নির্ণয়
করবেন।
অটিস্টিক শিশুদের শিক্ষা ও মূলধারার
শিক্ষা কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করণ
অটিস্টিক শিশুদের শিক্ষাদান একটি নিবিড়
এবং বিশদ পদ্ধতিতে হতে হবে। এর জন্য
বিশেষজ্ঞ পেশাজীবীদের সহায়তা প্রয়োজন,
এবং শিক্ষার্থীর আচরণ, বিকাশ, সামাজিক ও
একাডেমিক প্রয়োজনের ওপর ভিত্তি করে
সপ্তাহে কত সময় ধরে কোন কাজগুলো করা
হবে, তা নির্ধারণ করা হয়। এককভাবে
শুধুমাত্র একটি পদ্ধতি দিয়ে অটিস্টিক
শিশুদের শেখানো সম্ভব নয়; বরং একাধিক
পদ্ধতির সমন্বয়ে, পর্যায়ক্রমে বা একসাথে
বিভিন্ন শিক্ষাদান কৌশল ব্যবহার করতে
হয়।
অটিস্টিক শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয়
সহায়তা প্রদান এবং তাদের জন্য উপযুক্ত
ব্যবস্থা গ্রহণ করতে, সাধারণ শিক্ষার
ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদেরও
সহায়তা দিতে হবে। শিশুর শক্তিশালী দিক ও
চাহিদাগুলো চিন্তা করে প্রস্তুতি নেওয়া
এবং অভিভাবকদের মধ্যে যোগাযোগ রাখা
জরুরি। ইতিবাচক সাফল্য অর্জনের জন্য
কার্যকর কৌশল নির্ধারণ, সমন্বয় এবং
সহযোগিতার প্রয়োজন।
শুধু চিনিকক্ষে বসিয়ে রাখা নয়, বরং
অটিস্টিক শিক্ষার্থীদের মূল ধারার
কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি স্বল্প সময়ের জন্য
হলেও কার্যকর অন্তর্ভুক্তি তাদের
আত্মবিশ্বাস ও দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য
করে। অটিস্টিক শিক্ষার্থীদের সাফল্যের
জন্য তাদের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব থাকা
প্রয়োজন। তাই, ছোট ছোট সাফল্যগুলো
উল্লেখ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অটিজমের বৈশিষ্ট্যগুলো বুঝে, একজন
নির্দিষ্ট শিক্ষার্থীর গুণাবলী চিনে
তাদের জন্য উপযুক্ত পরিকল্পনা তৈরি
করলে, আরও ভালো ফল পাওয়া সম্ভব
হয়।
উপসংহার
উপরোক্ত বিষয় হতে অটিজম বিষয়ে
আমরা অনেক কিছুই জানলাম। অটিজম
শিশুদের সঙ্গে আমাদের কিরূপ আচরণ
করা উচিত এবং তাদের কিরূপ আচরণ
হয় এ সকল বিষয়ে আমরা জেনেছি।
সাধারণত সারাজীবন ধরে
অটিজমের লক্ষণগুলো একজনের মধ্যে
থাকতে পারে, তবে যথাযথ সাহায্য
নির্দেশনা ও উপযুক্ত শিক্ষা পেলে
সময়ের সঙ্গে কিছু কিছু লক্ষণের
উন্নতি হয়। যাদের মধ্যে
অল্পমাত্রার সমস্যা থাকে তাদের
উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয় এবং তারা
মোটামুটি স্বাভাবিক জীবন যাপন
করতে পারে। মাঝারি ও বেশি সমস্যার
শিশুদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে
তারা ঠিকমতো কথা বলতে পারে না,
এবং নিজের যত্ন নিতে পারেনা তবে
প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত করা
গেলে এবং নিবিড় প্রশিক্ষণ ও
নির্দেশনা পেলে অটিস্টিক শিশুরাও
নানা ক্ষেত্রে সফলতা পেতে
পারে।
Comments
Post a Comment