ইমেইল মার্কেটিং কি? কেন করবেন ইমেইল মার্কেটিং?
ইমেইল মার্কেটিং হলো একটি প্রযুক্তিগত পদ্ধতি, যার মাধ্যমে পণ্য বা সেবা
সম্পর্কে বিপণন করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় হাজার হাজার মানুষকে একসাথে ইমেইল
পাঠানো হয়।
এটি মূলত উন্নত দেশগুলিতে জনপ্রিয়, তবে আমাদের দেশে এখনও তেমন জনপ্রিয়তা
পায়নি। যেমন আমরা প্রতিদিন সকালে ফেসবুকের নোটিফিকেশন চেক করি, তেমনি উন্নত
দেশের মানুষ সকালে ইমেইল চেক করেন। ইমেইল মার্কেটিং ডিজিটাল বিপণনের একটি
গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩৯০ কোটি মানুষ ইমেইল
ব্যবহার করেছেন।
ইমেইল মার্কেটিং কি? কেন করবেন ইমেইল মার্কেটিং?
কেন করবেন ইমেইল মার্কেটিং?
শুধুমাত্র ২০১৯ সালে প্রতিদিন গড়ে ২৯৩ কোটি ইমেইল প্রেরণ ও গ্রহণ করা
হয়েছে। ইমেইল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে প্রতি ১ ডলার খরচ করে গড়ে ৪২ ডলার
লাভ করা সম্ভব। মাঝারি ব্যবসায়ীরা তাদের গ্রাহকদের ধরে রাখতে ৮০% সময়
ইমেইল ব্যবহার করেন। ওয়েলকাম ইমেইলের ওপেন রেট ৮০% (নতুন গ্রাহকদের স্বাগত
জানানো) এবং ইমেইলের মাধ্যমে রি-মার্কেটিং করে ৬৯% সফলতা অর্জন করা
যায়।
ইমেইল বিপনন বা মার্কেটিং এর সুবিধা কি?
কার্যকর ইমেইল ক্যাম্পেইনের খরচ অন্যান্য মার্কেটিং পদ্ধতিগুলোর চেয়ে
অনেক কম হতে পারে, এমনকি ফেসবুক মার্কেটিংয়ের তুলনায়ও। এর জন্য কোনো
বিজ্ঞাপন ফি, মুদ্রণ বা মিডিয়া স্পেস খরচ নেই।
আপনার মার্কেটিং তালিকাটি তাদের সমন্বয়ে তৈরি হবে যারা আপনার
ওয়েবসাইটে সাবস্ক্রাইব করেছেন অথবা টার্গেট কাস্টমারদের ইমেইল সংগ্রহ
করে তাদের কাছে মেইল পাঠানো হয়েছে। টার্গেট কাস্টমার হওয়ার কারণে তাদের
কাছে পণ্য বা সেবা বিক্রির সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
সুন্দর ইমেইল টেম্পলেট ব্যবহার করে মার্কেটিং করলে সেলস বাড়ানোর
পাশাপাশি ব্র্যান্ডের মানও বৃদ্ধি পায়, এবং ওয়েবসাইটে প্রচুর ট্রাফিক
আসে।
ইমেইল ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে আপনি মেইলগুলো পারসোনালাইজড করতে পারেন,
অর্থাৎ প্রত্যেক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে মেইল পাঠাতে পারেন।
পারসোনালাইজড মেইলের ওপেন রেট অনেক বেশি।
গ্রাহকদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগের জন্য ইমেইল মার্কেটিংই সবচেয়ে
কার্যকরী। অন্যান্য ডিজিটাল মার্কেটিং পদ্ধতিগুলোর মধ্যে ইমেইল মার্কেটিং
সবচেয়ে সহজ এবং সময় সাশ্রয়ী।
ইমেইল মার্কেটিং কি? কেন করবেন ইমেইল মার্কেটিং?
আপনার ব্যবসার প্রমোশন করুন ইমেইলে
পণ্য বা সেবা বিক্রয়: ব্যবসার পণ্য বা সেবা বিক্রি করতে
পারেন।ইভেন্ট বা ফেস্টিভ্যাল: বিশেষ দিনে (যেমন ঈদ, বইমেলা, প্রদর্শনী
ইত্যাদি) ব্যবসার প্রচার বা বিভিন্ন অফার প্রদান করতে পারেন।
কনফার্মেশন: গ্রাহক অর্ডার বা ক্রয় করলে তাদেরকে ফিরতি মেইলে নিশ্চিত
করতে পারেন।ধন্যবাদ জ্ঞাপন: গ্রাহক সাবস্ক্রাইব করলে বা সেবা গ্রহণ করলে তাদেরকে
ধন্যবাদ জানাতে পারেন।
ইমেইল বিপনন বা মার্কেটিং করার নিয়ম
পার্সোনাল ইমেইল আইডি থেকে ইমেইল ক্যাম্পেইন করা সম্ভব নয়। অর্থাৎ,
আপনি Gmail, Yahoo, Microsoft Outlook ইত্যাদি ব্যবহার করে ইমেইল
ক্যাম্পেইন করতে পারবেন না। এই সার্ভিসগুলো ফ্রি হওয়ার কারণে আপনি
একটি নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি ইমেইল পাঠাতে পারবেন না। যদি আপনি এসব
ফ্রি সার্ভিস ব্যবহার করে হাজার হাজার ইমেইল পাঠান, তবে আপনার
অ্যাকাউন্ট ব্লক হয়ে যেতে পারে।
সুতরাং, আপনার প্রয়োজন হবে বিজনেস ইমেইল (Business Mail) যেমন
abcd@gmail.com একটি পার্সোনাল ইমেইল, কিন্তু info@maitfirm.com একটি
বিজনেস ইমেইল। তাই পার্সোনাল ইমেইল এখানে উপযুক্ত নয়; বিজনেস ইমেইল
অপরিহার্য।
ইমেইল মার্কেটিং কি? কেন করবেন ইমেইল মার্কেটিং?
কিভাবে একসাথে হাজার হাজার কাস্টমারদের ইমেইল পাঠিয়ে মার্কেটিং
করা যায়?
Mailchimp
ইমেইল ক্যাম্পেইন করার জন্য বেশ কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে যারা
পেশাদারী মার্কেটিং সার্ভিস প্রদান করে। নিচে এমন ১০টি পরিচিত
ওয়েবসাইটের তালিকা দেওয়া হলো:• Campaign Monitor• Email Brain• Stream Send• Mad Mimi• Benchmark Email• Get Response• Constant Contact• Boomerang• Graphic Mail
১। ইমেইল কালেক্ট করা
ইমেইল ক্যাম্পেইন বা মার্কেটিংয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো
প্রচুর পরিমাণে ইমেইল সংগ্রহ করা। কারণ এই ইমেইল ঠিকানাগুলোর
মাধ্যমে আপনি পণ্য সম্পর্কে তথ্য পাঠাবেন এবং ক্রয় করার জন্য
গ্রাহকদের উৎসাহিত করবেন। যত বেশি ইমেইল সংগ্রহ করবেন, বিক্রির
সম্ভাবনাও তত বেশি বাড়বে।
ইমেইল ঠিকানা সংগ্রহ করার কিছু পদ্ধতি নিচে উল্লেখ করা
হলো:
- আপনার ওয়েবসাইটে সাবস্ক্রাইব অপশন যুক্ত করুন, যাতে ইমেইল
ঠিকানা সংগ্রহ করা যায় এবং ভবিষ্যতে ইমেইল পাঠানোর অনুমতি
পাওয়া যায়।
- বিভিন্ন কনটেস্ট আয়োজন করুন, যেখানে ব্যবহারকারীদের মেইল ড্রপ
করতে হয় এবং সেগুলো সংগ্রহে রাখুন।
- প্রফেশনাল ব্যক্তিদের ইমেইল ঠিকানা সংগ্রহের জন্য Yelp,
LinkedIn ইত্যাদি ওয়েবসাইট ব্যবহার করুন।
- Google Search করে ইমেইল ঠিকানা সংগ্রহ করা সম্ভব।
- বিভিন্ন ডিরেক্টরি থেকেও ইমেইল ঠিকানা সংগ্রহ করা যায়।
২। টেক্সট এবং ইমেইল ট্যামপ্লেট তৈরি করা
যেহেতু আপনি হাজার হাজার মানুষকে একসাথে ইমেইল করবেন,
তাই আপনার ইমেইলটি খুব প্রফেশনাল হতে হবে। এজন্য
প্রয়োজন:
- সুন্দর ইমেইল টেমপ্লেট ডিজাইন করা (এখন ড্র্যাগ
অ্যান্ড ড্রপ টুলের মাধ্যমে সহজেই সুন্দর টেমপ্লেট তৈরি
করা যায়)। অনেক ক্ষেত্রে ফ্রি সুন্দর টেমপ্লেটও পাওয়া
যায় যা ব্যবহার করা যেতে পারে।
- ইমেইলে কী লিখবেন সেটি নির্ধারণ করুন।
- Call To Action (CTA) বাটন যুক্ত করুন, যেমন Buy Now,
Shop Now, Learn More, Download App ইত্যাদি। এই
বাটনগুলো ব্যবহারকারীদেরকে আপনার পণ্য বা সেবার দিকে
উত্সাহিত করবে।
- রেসপন্সিভ (Responsive) টেমপ্লেট ডিজাইন করুন যাতে
আপনার ইমেইল মোবাইল, ট্যাব, এবং ডেস্কটপে সঠিকভাবে
প্রদর্শিত হয়।
- থিমফরেস্ট থেকে পেইড রেসপনসিভ টেমপ্লেট কিনতে
পারেন।
৩। ইমেইল ডেলিভারী দেয়া
ইমেইল ক্যাম্পেইন বা মার্কেটিংয়ের শেষ এবং সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো কার্যকরভাবে ইমেইল ডেলিভারি করা।
এর জন্য আপনি নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করতে
পারেন:
- ইমেইল পাঠানোর জন্য বিজনেস ইমেইল ব্যবহার
করুন।
- মার্কেটিং সেবা দেওয়ার জন্য সঠিক সাইট নির্বাচন
করুন (যেমন: Mailchimp, Aweber, Get Response,
Constant Contact)।
- মনে রাখবেন, Mailchimp-এ একবারে ২০০০ ইমেইল এবং
প্রতি মাসে ১২,০০০ ইমেইল ফ্রি পাঠানো যায়। তবে অন্য
সাইটগুলোতে স্প্যামিং এড়াতে বিশেষ নজর দিন।
- কিছু সাইটে ফ্রি সার্ভিস নেই, কিন্তু পেইড
মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে ইমেইল পাঠানোর কোনো লিমিট
নেই।
- ফ্রি সার্ভারের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তাই SMTP
সার্ভার ব্যবহার করা উত্তম।
ইমেইল ক্যাম্পেইন বা মার্কেটিং শেখার জন্য কেবল ব্লগ
পড়া যথেষ্ট নয়। তাই আপনি ইউটিউবে ইমেইল মার্কেটিংয়ের
টিউটোরিয়াল দেখতে পারেন। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে,
কমেন্ট বক্সে লিখুন। আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব,
ইনশা’আল্লাহ।
Comments
Post a Comment