কিভাবে আপনি ফ্রিল্যান্স ওয়েব ডিজাইনার বা ডেভেলপার হবেন
ফ্রিল্যান্সিং জগতের নানা ক্যাটাগরির মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো ওয়েব
ডেভেলপমেন্ট। কোডিং এবং লজিকের সমন্বয়ে নতুন সফটওয়্যার বা সাধারণ ওয়েবসাইট
তৈরি করা বর্তমানে একটি জনপ্রিয় সেবা। ওয়েব ডেভেলপমেন্টে অনেক বৈচিত্র্যময়
প্রকল্প রয়েছে। তবে, অন্যান্য সেক্টরের মতো এখানে নতুনদের কাজ পাওয়ার
ক্ষেত্রে কঠোর প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
আশার বিষয় হলো, এখন সাধারণ মানুষের মধ্যেও ওয়েবসাইট তৈরির চাহিদা বৃদ্ধি
পেয়েছে, যা অন্যান্য পেশার মানুষ যেমন লেখক, ফটোগ্রাফার, মার্কেটার এবং
মিউজিশিয়ানদেরও প্রয়োজনীয়তা তৈরি করছে। ওয়েব ডেভেলপাররা বিভিন্ন ধরনের
ব্যবসার জন্য অনলাইন উপস্থিতির সেবা দিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
করছেন।
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কাদের জন্য উপযুক্ত
সাধারণ ওয়েবসাইট তৈরি করে হাজার ডলার উপার্জন করা সহজ মনে হলেও, ওয়েব
ডেভেলপমেন্ট আসলে সবার জন্য নয়। এই সেক্টরের চ্যালেঞ্জগুলো জানার আগে কিছু
পজিটিভ দিকগুলো দেখা যাক:
# ওয়েব ডেভেলপমেন্ট মূলত একটি ক্যারিয়ারমুখি পেশা। এখানে নতুন বা বিগিনার
ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সুযোগ আছে, এবং অভিজ্ঞদের জন্য বেশি উপার্জনের
পাশাপাশি নিরাপদ ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগও রয়েছে।
# ডেভেলপমেন্টে দক্ষ হলে দ্রুত প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব।
# কোডিং বা ডেভেলপমেন্টে সফল ক্যারিয়ার গড়তে প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রীর বিশেষ
প্রয়োজন নেই। একটি ভালো কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগ, এবং কঠোর পরিশ্রমের
সঙ্গে শেখার ইচ্ছা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
চ্যালেঞ্জগুলো কি কি
# ওয়েব ডেভেলপমেন্টের বেসিক বিষয়গুলো শিখতে সময়, ধৈর্য এবং নিয়মিত
প্র্যাকটিসের প্রয়োজন।
# ফ্রিল্যান্স ব্যবসায় প্রকল্প ম্যানেজ করা কঠিন।
# ক্লায়েন্টের সন্তুষ্টি বজায় রেখে নিয়মিত কাজ করা আরেকটি বড়
চ্যালেঞ্জ।
ওয়েব ডেভেলপমেন্টের ক্যাটাগরি
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট প্রধানত দুই ভাগে বিভক্ত:
১) **ফ্রন্ট-এন্ড ডেভেলপমেন্ট**
ফ্রন্ট-এন্ডে মূলত ওয়েবসাইট বা সফটওয়্যারের ডিজাইন, অর্থাৎ
লুক এবং ফিল নিয়ে কাজ করা হয়। সাইটের UI এবং ভিজ্যুয়াল
প্রেজেন্টেশন কেমন হবে, তা নিয়ে ফ্রন্ট-এন্ড ডিজাইনাররা কাজ
করেন। এই ক্যাটাগরিতে কোয়ালিটি গ্রাফিক ডিজাইন স্কিলের
পাশাপাশি এডোবি ফটোশপ (Adobe Photoshop), ইলাস্ট্রেটর
(Illustrator), স্কেচ (Sketch) ইত্যাদি টুলসের ব্যবহার
প্রয়োজন।
২) **ব্যাক-এন্ড ডেভেলপমেন্ট**
ব্যাক-এন্ড ডেভেলপমেন্টে সাইটের স্ট্রাকচার, কনটেন্ট
ম্যানেজমেন্ট এবং সার্ভার ম্যানেজমেন্টের মতো জটিল বিষয় নিয়ে
কাজ করা হয়। বিশাল ডেটাবেসের সার্ভিস ওয়েবসাইটগুলো, যেমন
কোর্সেরা (Coursera) বা হেলথলাইন, মিলিয়ন ব্যবহারকারীর জন্য
স্মুথ পারফর্মেন্স নিশ্চিত করতে নিয়মিত আপডেট, মেইনটেনেন্স এবং
সিকিউরিটি বজায় রাখতে হয়। ব্যাক-এন্ডে কোডিং ল্যাঙ্গুয়েজের
দক্ষতা, সাইট সংক্রান্ত ক্রিটিকাল ইস্যু সমাধানের ক্ষমতা, এবং
হাই ফাংশনালিটি প্রোডাক্ট তৈরি করার সক্ষমতা অপরিহার্য।
৩) **ফুল স্ট্যাক ওয়েব ডেভেলপার**
ফুল স্ট্যাক ডেভেলপমেন্ট ফ্রন্ট-এন্ড এবং ব্যাক-এন্ড উভয়ই
অন্তর্ভুক্ত করে। এখানে UI, UX, ডাটাবেস এবং কোর ডেভেলপমেন্টসহ
ওয়েবসাইটের মোটামুটি সব দিকের কাজ করা হয়। বর্তমানে সব
মার্কেটপ্লেসে ফুল স্ট্যাক ফ্রিল্যান্স ডেভেলপারদের চাহিদা
অনেক।
স্কিল এবং কোডিং এক্সপিরিয়েন্সের ভিত্তিতে ডেভেলপারদের তিন
শ্রেণীতে ভাগ করা যায়:
# **লেভেল-১:** এই ধাপে একজন ডেভেলপার ওয়ার্ডপ্রেস
(WordPress), উইক্স (WIX) ইত্যাদি কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট
সিস্টেমে ওয়েবসাইট তৈরি, ডিজাইন বা কাস্টমাইজ করতে দক্ষ।
# **লেভেল-২:** মোটামুটি মানের দক্ষতা থাকলে জাভাস্ক্রিপ্ট
(JavaScript) ফ্রেমওয়ার্ক এবং অন্যান্য স্ক্রিপ্টিং
ল্যাঙ্গুয়েজে কাজ করার দক্ষতা থাকে।
# **লেভেল-৩:** স্কিলড ডেভেলপাররা অবজেক্টিভ সি++ (C++), সি#
(C#), পাইথন (Python), রুবি (Ruby), এসকিউএল (SQL) ইত্যাদির
মতো জটিল বিষয়গুলোতে পারদর্শী।
তবে লেভেল-১ ক্যাটাগরির স্কিল নিয়ে ওয়েব ডেভেলপমেন্টের মতো
প্রতিযোগিতামূলক ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিং ব্যবসায় সফল হওয়া
অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং।
শুরু করবেন কিভাবে
কমপ্লেক্স ফাংশনালিটি, যেমন জাভাস্ক্রিপ্ট শেখা বেশ
কঠিন। সার্ভার সাইড ভাষা যেমন রুবি অন রেইলস, MySQL, বা
PHP শিখতে চাইলে নিয়মিত প্র্যাকটিস প্রয়োজন।
ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট শুরু করার আগে সবচেয়ে ভালো
হলো কোন ভাষা বা সেকশনে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন
তা নির্ধারণ করা। আপনি কি ফ্রন্ট, ব্যাক, নাকি ফুল
স্ট্যাক ডেভেলপমেন্টে আগ্রহী? আপনার দক্ষতা কেমন? যদি
আগে থেকেই কোডিংয়ের কিছু জ্ঞান থাকে, তাহলে এডভান্স
লেভেলের কাজ শেখার চেষ্টা করুন। আর যদি একদম নতুন হন,
তাহলে অফলাইন কোডিং বুটক্যাম্প, Codecademy,
FreeCodeCamp ইত্যাদি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে
শিখতে পারেন।
সুইফট, নোড জেএস, বুটস্ট্র্যাপ ইত্যাদি কোডিং ভাষায়
পারদর্শী ডেভেলপারদের বাজারে চাহিদা বেশি। তাই শুরু করতে
পারেন যেকোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে। নতুনদের জন্য পাইথন
শেখা সহজ এবং এর চাহিদাও রয়েছে।
শুরু করুন ডেভেলপমেন্ট
পছন্দের নিশ বের করার পর এখন কাজ শুরু করার সময়।
অর্থাৎ, আপনি যা শিখছেন তা ব্যবহার করে নতুন কিছু
তৈরি করুন। HTML এবং CSS দিয়ে একটি পোর্টফলিও
ওয়েবপেজ তৈরি করতে পারেন। এছাড়া, জাভাস্ক্রিপ্ট
ব্যবহার করে সাধারণ ক্যালকুলেটর, মজার স্নেক গেমস
বা পার্সোনাল রিডার ইত্যাদি ছোট প্রকল্প করতে
পারেন। এতে যেমন আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়বে, তেমনই
কোডিং শেখার এই যাত্রাটি হবে আরও উপভোগ্য।
পাশাপাশি, এটি আপনার আইডিয়া ডেভেলপমেন্ট ও সমস্যা
সমাধানের দক্ষতা গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
রাখবে।
পোর্টফলিও
ফ্রিল্যান্স বিজনেসের অন্য যে কোনো সেকশনের মতো
ওয়েব ডেভেলপমেন্টে পোর্টফলিও থাকা অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। পোর্টফলিওকে অনলাইন সিভি বলা হয়।
আপনি যে ভালো কাজ করেন বা বিশেষ কোনো প্রজেক্টের
রেফারেন্স দিতে পারেন, সবকিছুর জন্য এটি এক
ধরনের সমাধান। এছাড়া, ক্লায়েন্ট খুঁজে পাওয়া,
প্রজেক্টে কনভিন্স করা এবং লেটেস্ট টেকনোলজির
সঙ্গে নিজেকে আপডেট রাখার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো
পোর্টফলিও।
অনলাইন প্রোফাইল
ফ্রিল্যান্স ডেভেলপারদের অন্যতম পছন্দের
মার্কেটপ্লেস হলো Fiverr, Upwork, এবং
PeoplePerHour। এছাড়া, LinkedIn-এও
কন্ট্রাকচুয়াল ওয়েব ডেভেলপমেন্টের বিশাল
মার্কেট রয়েছে। কাজ পাওয়ার জন্য
মার্কেটপ্লেসের সুযোগ-সুবিধা, কমিশন, এবং
ডিমান্ড ইত্যাদি যাচাই করে পছন্দের
প্ল্যাটফর্মে প্রোফাইল তৈরি করুন। এরপর
প্রয়োজনীয় তথ্য, প্রফেশনাল পোর্টফলিও, এবং
রেজুমে ইত্যাদি যোগ করে আপনার প্রোফাইল
কমপ্লিট করার সময় এসেছে। যেহেতু মার্কেটপ্লেসে
ক্লায়েন্ট প্রথমেই আপনার প্রোফাইল দেখে আপনার
সম্পর্কে ধারণা নেবেন, তাই প্রোফাইলটি যতটা
সম্ভব আকর্ষণীয় করতে হবে।
উপসংহার
অনলাইন যুগে ওয়েবসাইট এর বিকল্প
নেই। আর ওয়েবসাইট বানাতে ওয়েব
ডিজাইনার এর প্রয়োজন। আপনি যদি ওয়েব
ডিজাইনার ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে চান
তবে আজ থেকেই ওয়েব ডিজাইন
শেখা শুরু করতে পারেন। আশাকরি, ওয়েব
ডিজাইন সম্পর্কে আপনাদের যে কোন
প্রশ্ন ও
পরার্মশ আমাদেরকে জানাবেন।
Comments
Post a Comment